নিঝুম দ্বীপ


 

নিঝুম দ্বীপ (Nijhum Dwip), নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ড। হাতিয়ার মূল ভূখন্ড থেকে দক্ষিণে জেগে ওঠা এই নির্জন সৈকতের নাম নিঝুম দ্বীপ।    হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি ছোট দ্বীপ ইউনিয়ন । এটি বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত ।  বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি এই চারটি প্রধান দ্বীপ ও বেশ কয়েকটি ছোট চরের সমন্বয়ে নিঝুম দ্বীপ, যার আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর৷ চর ওসমান, বালুয়ার চর, গোল্ডেন আইল্যান্ড  1950 এর দশকের গোড়ার দিকে নোয়াখালীর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অগভীর মোহনায় একটি পলিমাটির মতো একটি দ্বীপের গুচ্ছ (প্রধানত বল্লার চর, কমলার চর, চর ওসমান এবং চর মুড়ি) আবির্ভূত হয়। নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর ইছা মাছ (চিংড়ি মাছ) ধরা পড়তো বিধায় জেলেরা এই দ্বীপের নাম দেয় ইছামতির দ্বীপ। এই দ্বীপটিতে মাঝে মাঝে বালির ঢিবি বা টিলার মত ছিল বিধায় স্থানীয় লোকজন এই দ্বীপকে বাইল্যার ডেইল বা বালুয়ার চর বলেও ডাকতো যা পরবর্তীতে বল্লার চরে রূপান্তরিত হয়। দ্বীপটি সম্পূর্ণ নিরব হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। 14,050 একর (5,686 হেক্টর) এলাকা দখল করে, দ্বীপটি 21 0 1 / থেকে 22 0 6 / উত্তর অক্ষাংশ এবং 90 0 3 / থেকে 91 0 4 / পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণে পাশে প্রায় ১২ কিমি উন্মুক্ত বিশাল সি-বিচ সমৃদ্ধ ১৯৪০-এর দশকে এখানে প্রথম মানুষের পদচারণা শুরু হয় ১৯৪৪ সালে শীত মৌসুমে কিছু জেলে এসে অস্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করে দ্বীপে ১৯৭৩ সালে হাতিয়ার তৎকালীন সাংসদ বনমন্ত্রী পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, নৌবাহিনীর লোকজন এবং দেশীবিদেশী পর্যটকসহ দ্বীপ ভ্রমণে এসে সবুজ শান্ত সিড়বগ্ধ বনরাজিসমৃদ্ধ বিমোহিত রূপ দেখে এর নামকরণ করেন নিঝুম দ্বীপ বনবিভাগের নজর পড়ে এদিকে, শুরু হয় পরিকল্পিত বনায়ন বিশেষ করে জোয়ারভাটা অধ্যুষিত লোনাপানির উপযোগী কেওড়া, বাইন, হেতাল, গরান, গোলপাতা প্রভৃতি গাছের চারা বীজ বপন শুরু হয় দ্বীপে ছাড়া হয় কয়েকটি চিত্রল হরিণ অজগর বানর মনুষ্যবসতিও শুরু হয় পর্যায় সবাই প্রধানত জেলে, মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করাই প্রধান কাজ দ্বীপটিতে বানরকূল তেমন বংশ বিস্তার করতে না পারলেও হরিণের বৃডিং গ্রাউন্ড হিসেবে সবিশেষ উপযোগী হরিণের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে বর্তমানে (২০১৩) প্রায় ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে মাঝে মধ্যে এদের খাদ্য সংকট দেখা দেয় ফলে লোকালয়ে হানা দেয় অবলা প্রাণীগুলো দ্বীপের প্রধান সড়ক একটি৷ দ্বীপের এক পাশে থেকে আরেক পাশে সোজা চলে গেছে এখানে তিনটি বাজার আছে এর মত৷ নিঝুম দ্বীপের মূল জনবসতির নাম হলো নামা বাজার নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে৷ দ্বীপের ভেতর যাতায়াতের জন্য রিক্সা এবং মোটর সাইকেল রয়েছে৷ তবে মোটর সাইকেলই বেশি৷ অনেক দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায় দ্বীপে ঘুরার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া করা যায়৷ মূল দ্বীপসহ আশপাশের দ্বীপগুলোতে শীতকালে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি৷ এদের মধ্যে আছে সরালি, লেনজা, জিরিয়া, পিয়ং, চখাচখি, রাঙ্গামুড়ি, ভূতিহাঁসসহ নানারকম হাঁস, রাজহাঁস, কাদাখোঁচা, জিরিয়া, বাটান, গুলিন্দাসহ জলচর নানা পাখি, হরেক রকমের গাংচিল, কাস্তেচরা ইত্যাদি৷ কদাচিৎ আসে পেলিক্যান। আর বছরজুড়ে সামুদ্রিক ঈগল, শঙ্খচিল, বকসহ নানা স্থানীয় পাখি তো আছেই। দ্বীপের আশপাশের জঙ্গলেই আছে হরিণ, শেয়াল, বন্য শূকর, নানা রকম সাপ বানর


দ্বীপটি মূলত বেশ কিছু চরের সমষ্টি নিয়ে গঠিত। মধ্যখানে প্রবাহিত হয়েছে নদী আর খাল, যেন দ্বিতীয় সুন্দরবন। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় শীতকালে শীতের তীব্রতাও তুলনামূলকভাবে এখানে অনেক কম। ফুরফুরে মনভোলানো স্নিগ্ধ সামুদ্রিক বাতাস দিবে এক অন্যান্য সুখের অনুভূতি। এই দ্বীপের দক্ষিণে জেগে উঠেছে নতুন একটি চর, ভ্রমণপিয়াসীরা নাম দিয়েছেনভার্জিন আইল্যান্ড প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে চাইলে আসুন নিঝুপ দ্বীপে।

নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

1.   কমলার দ্বীপ: সেখানের কমলার খালে অনেক ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও আশে পাশের দ্বীপগুলো সুন্দর। পুরো দ্বীপটা হেঁটে হেঁটে ঘুরে আসা যায়, মন ভরে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের পরে জাহাজ থেকে এই দ্বীপে কয়েক বাক্স কমলা পড়ে থাকতে দেখে এর নামকরণ করা হয় কমলার দ্বীপ

2.   চৌধুরী খাল কবিরার (কবির নামে এক জেলের নৌকা ডুবে যায়) চর

3.   চোয়াখালী ফরেস্ট চোয়াখালী সমুদ্র সৈকত

4.   ম্যানগ্রোভ বন: নিঝুম দ্বীপ বনায়ন প্রকল্প। আছে কেওড়া গাছ, গেউয়া গাছ আর লতাগুল্ম

5.   নামার বাজার সমুদ্র সৈকত (প্রধান ভূমি সৈকত):

6.   দমার চর: বঙ্গোপসাগরেল সম্প্রতি আরো একটি সমুদ্র সৈকত জেগে উঠেছে। সৈকতটি একেবারে আনকোরা, কুমারী। একে এখন ডাকা হচ্ছেকুমারী সমুদ্র সৈকতবলে। নিঝুম দ্বীপের লোকজন এবং মাছ ধরতে যাওয়া লোকেরা এই সৈকতকে বলেদেইলাবা বালুর স্তুপ













Comments

Popular posts from this blog

প্রত্যয়ণ পত্র এ মর্মে প্রত্যয়ণ করা যাইতেছে যে, এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের আংশিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিবেশ বিভাগ

Sundarban