হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্ম ও আরব পরিবেশ

 

হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মপূর্বে আরবদের অবস্থা

প্রায় ১৪০০ বছর আগের কথা। আরব উপদ্বীপে তখন চরম উচ্ছৃঙ্খলতা ও পাপাচার বিরাজমান। গোত্রে গোত্রে চলত আভিজাত্য ও বংশমর্যাদার বড়াই। সামান্য কারণে শুরু হত যুদ্ধ, হত্যা আর লুন্ঠন। সেই সময় আরবদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বোঝাতে ঐতিহাসিকরা এই যুগের নামকরণ করেন ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বা অজ্ঞানতার যুগ। 

আরব সমাজ যখন অন্যায়-অপরাধ আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত, ঠিক সেই সময় এমন এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয় যিনি পরবর্তীতে শুধু আরবেই নয়, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। একক ব্যক্তি হিসেবে যার অসামান্য জীবনী নিয়ে লেখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি জীবনীগ্রন্থ। 

অনুমান করতে পারেন কি, কে সেই মহান ব্যক্তিত্ব? 

বলছিলাম ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এমনই অসাধারণ ছিল যে তাঁর বিরুদ্ধবাদীরাও তাঁর প্রশংসা না করে পারেন না। মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল ও প্রশংসনীয়। 

বলতে পারেন কোন মানবীয় গুণাবলির জন্য তাঁর প্রচারিত জীবন বিধান ইসলাম গ্রহণ না করেও অনেকেই তাঁকে মহামানবের স্বীকৃতি দিয়েছেন? আপনার মতে বর্তমান বিশ্বের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তাঁর মত নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের সাথে শেয়ার করতে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। 

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কেমন ছিলেন ইসলামের শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ(সা)। 

জন্ম ও বেড়ে ওঠা

৫৭০ খ্রীষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল। মক্কা নগরীর বিখ্যাত কুরাইশ গোত্রের বনু হাশিম বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মা আমিনা নবজাতকের নাম রাখেন আহমাদ। দাদা আব্দুল মুত্তালিব ভালোবেসে তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মাদ।

আরবদের রীতি অনুযায়ী মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সুস্থ দেহ ও সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য শিশু মুহাম্মদ কে রাখা হয় ধাত্রী হালিমার কাছে। নির্দিষ্ট সময় পর তাঁকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাঁর মায়ের কোলে। ৬ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর মায়ের সাথে কাটান। 

জন্মের পূর্বে পিতা আব্দুল্লাহ আর ৬ বছর বয়সে মা আমেনাকে হারিয়ে শিশু মুহাম্মদ বড় হতে থাকেন দাদার তত্ত্বাবধানে। তাঁর বয়স যখন ৮ বছর, তখন তাঁর দাদাও ইন্তেকাল করেন। দাদার পর চাচা আবু তালিব দায়িত্ব নেন ভাতুষ্পুত্র মুহাম্মদ এর। 

শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন কোমল স্বভাবের। তাঁর উত্তম চরিত্র, সদাচরণ ও সত্যাবাদিতার কারণে তাঁকে ডাকা হত ‘আল-আমীন’ বা ‘বিশ্বাসী’। আরবদের মধ্যে বিদ্যমান অন্যায়-অনাচার, খেয়ানতপ্রবণতা এবং প্রতিশোধস্পৃহা তাঁকে  ভীষণভাবে নাড়া দিত। তাই মক্কায় ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘হিলফুল ফুজুল’ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনিও তাতে যোগ দেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে এই সংঘকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। 

পেশাগত জীবনের প্রথম দিকে তিনি ছিলেন রাখাল। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসা শুরু করলে অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন একজন সফল ব্যবসায়ী। ২৫ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন ৪০ বছর বয়সী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ কে। 

খাদিজা(রা) এর জীবদ্দশায় তিনি আর কোনো বিয়ে করেন নি। তবে পরবর্তীতে আদর্শিক প্রয়োজনে, নারী সমাজের বিভিন্ন উপকারের জন্য এবং আরবদের বিভিন্ন কুসংস্কার ও অযৌক্তিক প্রথা দূর করার জন্য তিনি মোট ১১টি বিয়ে করেন। 

খাদিজা(রা) এর গর্ভে মুহাম্মদ(সা) এর ৬ জন সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাদের নাম যথাক্রমে কাসিম, জয়নাব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম, ফাতিমা এবং আবদুল্লাহ। একমাত্র ফাতিমা ব্যতীত সকলেই তাঁর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করেন। 

৩৫ বছর বয়সের পর তিনি নির্জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়ত লাভ করেন। তাঁর উপর অবতীর্ণ হয় মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। যা মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। 

ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তাকে মক্কার কুরাইশদের নিদারুণ অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেন। ইসলামি পঞ্জিকায় হিজরতের বর্ষ থেকে দিন গণনা শুরু হয়। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মক্কার কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যা ইতিহাসে বিখ্যাত বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ প্রভৃতি নামে। 

৬৩০ খ্রিস্টাব্দে বা ৮ম হিজরিতে মুহাম্মাদ(সা) বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ ছাড়া প্রায় বিনা প্রতিরোধে মক্কায় প্রবেশ করেন এবং বিজয় লাভ করেন। সেদিন তিনি মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করেন। তাঁর ক্ষমাগুণে মুগ্ধ হয়ে অধিকাংশ মক্কাবাসীই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। 

১০ম হিজরিতে অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হজ্জ পালনকালে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তিনি ভাষণ দেন। যা মুহাম্মাদ(সা) এর জীবিতকালে শেষ ভাষণ হিসেবে ‘বিদায় খুৎবা’ বা ‘বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ’ নামে পরিচিত। 

বিদায় হজ্জ্ব থেকে ফেরার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল ৬৩ বছর বয়সে মুহাম্মাদ(সা) ইন্তেকাল করেন। আর মানবজাতির জন্য রেখে যান এক উত্তম আদর্শ।

বিদ্বেষপোষণ না করাই রাসুলুল্লাহর (স) সুন্নাত
আর এটাই তাঁর প্রতি ভালোবাসা
==========================
عن أنس رضي الله عنه قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم :
«يا بني، إن قدرت أن تصبح وتمسي وليس في قلبك غش لأحد فافعل، ثم قال: يا بني، وذلك من سنتي، ومن أحب سنتي فقد أحبني، ومن أحبني، كان معي في الجنة» .
------------------------------------------أخرج الترمذي
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বৎস! সকাল-সন্ধ্যায় (যে কোনো সময় হোক না কেন) তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ থাকবে না-যদি তুমি এ এরূপ মনোভাব পোষণে সক্ষম হও, তবে তাই কর। তারপর তিনি বললেন, হে বৎস, এটিই হলো আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত ভালোবাসলো সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।
----------------তিরমিযি ২৬৭৮, মিশকাত ১৭৫

Comments

Hefzul said…
বিদ্বেষপোষণ না করাই রাসুলুল্লাহর (স) সুন্নাত
আর এটাই তাঁর প্রতি ভালোবাসা
==========================
عن أنس رضي الله عنه قال: قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم :
«يا بني، إن قدرت أن تصبح وتمسي وليس في قلبك غش لأحد فافعل، ثم قال: يا بني، وذلك من سنتي، ومن أحب سنتي فقد أحبني، ومن أحبني، كان معي في الجنة» .
------------------------------------------أخرج الترمذي
হযরত আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বৎস! সকাল-সন্ধ্যায় (যে কোনো সময় হোক না কেন) তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ থাকবে না-যদি তুমি এ এরূপ মনোভাব পোষণে সক্ষম হও, তবে তাই কর। তারপর তিনি বললেন, হে বৎস, এটিই হলো আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত ভালোবাসলো সে যেন আমাকে ভালোবাসলো। আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।
----------------তিরমিযি ২৬৭৮, মিশকাত ১৭৫

Popular posts from this blog

প্রত্যয়ণ পত্র এ মর্মে প্রত্যয়ণ করা যাইতেছে যে, এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের আংশিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিবেশ বিভাগ

Sundarban